আসিফ ইভান

 ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে রিয়াজ নতুন গাড়ি কিনেছে। একদম ঝকঝকে সিলভার কালারের গাড়ি। গাড়ি দেখে স্ত্রী, দুই সন্তান আর বাবা-মা তো ভীষণ খুশি। ঠিক দুই মাস আগে নতুন এপার্টমেন্টে উঠেছে। পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজের ভাগ্যটাও বেশ ভাল ফেভার করেছে। বছর বছর চাকুরীতে পদন্নোতি পাচ্ছে। বেতনও বেড়ে চলছে হু হু করে। তাই দ্রুত ব্যাংক লোন নিয়ে সেই টাকায় বাড়ি-গাড়ি সব কিনে ফেলল। সংসারে যেন আনন্দের বন্যা বইছে। সেই সুবাদে রিয়াজ বাসায় একটা পার্টি দিল। অফিস কলিগরা দুপুর থেকে বিকেল আর আত্নীয়-স্বজনেরা সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত আমন্ত্রিত ছিল। বেশ হৈ-হুল্লোর আর খাওয়া দাওয়ায় রিয়াজ পার্টি শেষ করলো। সবাই বেশ খুশি আর রিয়াজের প্রশংশায় পঞ্চমুখ। সকাল হলেই রিয়াজ গাড়ি করে অফিস করবে,ছেলেমেয়েরা গাড়ি করে স্কুলে যাবে, স্ত্রী গাড়ি করে শপিং এ যাবে, গ্রামে বেড়াতে গেলেও গাড়ি করে যাবে ভাবতেই গর্বে রিয়াজের বুক ফুলে উঠতে লাগল। রিয়াজ ড্রাইভিংটাও শিখে নিয়েছে। রিয়াজ পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য খুব চিন্তা করত। অর্থ সম্পদ জমানো রিয়াজের যেন নেশা। স্ত্রীর নামে ২৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দিয়েছে। ছেলেমেয়ের নামে মোটা অংকের ডি.পি.এস আর এফ.ডি.আর করে ...

 "I hope you fall in love I hope it breaks your heart" পাসুরি গানের একটা লাইনের ইংরেজি অর্থ এমন ... এই লাইনটাতে এসে আমি একটু আটকে গেলাম ... ঠিক এমন একটা ভয়ংকর অভিশাপের সুর শুনেছিলাম অনেক যুগ আগে ... দুটো মানুষের পথ যখন আলাদা হয়ে যায়, সেটার একপাশে থাকা কান্না আর অভিশাপ ... অন্য পাশে থাকে অনুভূতিহীন শীতল একটা হৃদয়! আচ্ছা, অভিশাপ কি কখনো সত্যি হয়?  জীবনের বিভিন্ন বাঁকে যার চোখের দিকে তাকিয়ে যাযাবর মনটা আশ্রয় খুঁজতো, সেই চোখে আশ্রয় মিলেছিল ঠিকই ... কিন্তু কোন আশ্রয়ই স্থায়ী ঠিকানা হয়ে ওঠে নি! ব্যর্থ অসমাপ্ত প্রেমের গল্পের দুটো ভার্সন থাকে ... বেশিরভাগ সময়েই দুই ভার্সনে অপরাধী আর ভিক্টিম হয় ভিন্ন ভিন্ন মানুষ !!  আমরা নিজেকে বুঝাই, অন্যকে বুঝাই, জগতকে বুঝাই - আমিই ভুক্তভোগী, আমিই নিষ্পাপ, আমার সাথেই ভীষণ অন্যায় করে কেউ চলে গিয়েছে ... সেটার কতটুকু সত্যি - তার পাই টু পাই হিসেব জানে শুধু তিনজন ... ঐ দুটো মানুষ আর স্বয়ং স্রষ্টা !!  গল্পের পরে আসে ভালো থাকা-খারাপ থাকা আর কর্মফলের থিওরী ... আমাদের মধ্যে একদল মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, যে কষ্ট দিয়ে গেছে, সে কখনোই সুখী হয় না ... ...

 "I'm tired of being what you want me to be"  Linkin Park এর Numb গানের প্রথম লাইন এবং সবচেয়ে প্রিয় লাইন ... ২০০৩ সালে যখন গানটা শুনতাম, তখন এই লাইনটার অর্থ বুঝতাম ঠিকই, কিন্তু অনুভব করতে পারতাম না ... জীবনের ম্যাপের অজস্র অলিগলি ঘুরে এসে এখন বোধহয় অনুভব করতে পারি এই কথাটুকু !!  জীবনের একটা পর্যায় পর্যন্ত আমরা 'আমি' হয়ে থাকি ... একদম নিজের মত, নিজের ভেতরে যা ভাবি, সব বলে দিই ... নিজের বিশ্বাস, নিজের সত্যিকারের অনুভূতি, নিজের সমস্ত ইমোশন - সবকিছু উজাড় করে দিই মানুষের কাছে ... আমরা ছিলাম স্বচ্ছ জলের মত, আমাদের চোখের দিকে তাকালে বুঝা যেত আমরা কি চাই, কাকে ভালোবাসি, কাকে ঘৃণা করি ... খোলা গল্পের বইয়ের মত আমাদের পড়া যেত, বুঝা যেত !!  তারপর?  তারপর আমরা ধাক্কা খাই ... আমাদের সহজ-সুন্দর স্বচ্ছ জলের মত জীবনটা হোঁচট খায় 'বাস্তবতা' নামক পাথরে ... আমরা টের পাই, এই জগতে সত্যিকারের 'আমি' হয়ে টিকে থাকাটা বড্ড কঠিন ... আমাদের পায়ের নিচ থেকে নরম মাটি সরে যায়, সেখানে শক্ত কাঠের একটা মঞ্চের অস্তিত্ব টের পাই ... আমরা টের পাই, আমরা আর মানুষ নাই ... আমরা এখন পারফর্মার ...

 "Nuhash Humayun should come up with a 5th and season finale episode of পেট কাঁটা ষ where the main character having long hair will go to Cox's Bazar and start a Mishtir Dokan there. He will return home buying a fish crossing the beach side at midnight.  He will meet the ultimate villain ghost who is an avid fish lover but have a problematic leg. He will call the main character to come to the sea and if the character refuses his call twice, he won't just stand there.  He will give a goddamn dourani to the character holding a sharp boti so that no one will ever dare to go near fish, sweets or beach for the rest of their life !!"

 "একদম হুটহাট কোন আয়োজন ছাড়াই যেমন আমরা মরে টরে যাই, অমন করে কি আমাদের অনুভূতিরাও হুট করে মরে যায়? ... তা না হলে একদিন খুব সকালে আমার কেনই বা মনে হল, মানুষটাকে আমি আর চাই না? তোমাকে আমি আর চাই না - এই সহজ কিন্তু ভয়ংকর নিষ্ঠুর সত্যটুকু আমি কখনো মুখ ফুটে তারে বলতে পারি নাই ... বারবার বলতে নিতাম, আর অমনি শব্দরা অতীতের সমস্ত সুখস্মৃতির মিছিলের ব্যারিকেডে মাছের কাঁটার মত গলায় আটকে যেতো !!  অবশ্য সে যে টের পেতো না, এমন না ... কারো উপর থেকে মন উঠে গেলে, তার অস্তিত্ব আর আমাদের ভাবায় না ... আগে যার নীরবতাও কান পেতে শুনতাম, এখন তার কথাগুলোও কেমন বাতাসে মিলিয়ে যায় তুচ্ছ বাদামের খোসার মত !!  মানুষ ভালোবাসা সহজে টের পায় না, তবে অবহেলা টের পেয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি ... তবুও সে সময় নেয় ... কারণ কাছের মানুষটাও যে একদিন তীব্র অবহেলা করতে পারে, ওটা কেউ অনেকটা সময় ধরে বিশ্বাস করতে পারে না, বিশ্বাস করতে চায় না !!  আমাদের এই গল্পে কোন টুইস্ট, নাটকীয়তা কিছুই ছিল না ... গল্পরা প্রায়শই সুন্দর হয়, আর জীবন হয় লবণবিহীন তরকারির মত পানসে, বিস্বাদ এবং বোরিং ... আমাদের নির্ভেজাল নির্ঝঞ্ঝাট প্রেমে হুট ...

 "বার্ষিক পরীক্ষা চলে, আর মাত্র দুইটা পরীক্ষা বাকি ... এরপর এক মাসের ছুটি ... মনে মনে নিজেরে বলতাম, এই দুইটা পরীক্ষা শেষ হইলেই শান্তি ... গ্রামের বাড়ি বেড়াইতে যাবো, বিকালে ঘুড়ি উড়াবো, জীবনে কোন প্যারা থাকবে না ... জীবন একদম সেট !!  ঐ ছুটিতে আমার জ্বর হইসিলো ... জীবনটা সেট করতে পারি নাই !!   কলেজ লাইফে সবাই বলতো, একটা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাইলে নাকি জীবন একদম সেট ... ভালো ভার্সিটির অমুক সাবজেক্টটা পাইলেই জীবন পুরা সেট ... জীবন সেট করতে পাগলের মত চেষ্টা করলাম ... ভার্সিটিতে গিয়েও জীবন সেট হয় নাই ... আর্থিক টানাপোড়েন, প্রেম, সিজিপিএ আর ক্যারিয়ারের দুশ্চিন্তা ... জীবন তখনও দুলছে পেন্ডুলামের মত !!  একটা ভালো চাকরি পাইলেই নাকি জীবন সেট ... ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করতে পারলেই নাকি জীবনটা একদম সেট ... তারপর জীবন সেট করতে বাচ্চা নিতে হয় ... উমম, ভাড়া বাসায় আর কত, নিজের একটা ফ্ল্যাট হইলে কিন্তু জীবন সেট ... ক্যারিয়ারের অমুক পজিশনে পৌছাইতে পারলেই কিন্তু জীবন সেট !!  আচ্ছা, জীবনটা কি কখনো সেট হয়? বছর তিনেক আগের কথা ... তিনটা গাড়ি কিনেছিলাম, ব্যবসা করতাম, মাস শেষে বেশ...